আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছেন কুরান হাদিস এ সব কিছু সহজ ভাবে বুঝানোর পর ও ফতুয়ার পিছু থাকেন, তাই কিছু ফতুয়া পেশ করা হল।
ফতুয়া তালাক
১ মজলিস এ একত্রিত ৩ তালাক এক হিসেবে গন্য হয় ১ম হিজরী হতে এখন পর্যন্ত কোরআন সহীহ হাদীস ও এজমা এর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর অনেক বড় বড় আলেমগন এমন ফতোয়াই দিয়েছেন ,
কিতাবগুলোর নামসমূহ ঃ
০১। (তাসমিয়াতুল মফতিন তালাক আসসালাসা লাফসুন ওয়াহিদ্দিন) এই কিতাবে পৃথিবীর পঞ্চাশটি বড় বড় মুফতি মুহাদ্দিসের দেওয়া ফতোয়া আছে সকলের মতে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
০২। ফতোয়াল বারী এটি আর একটি বিখ্যাত কিতাব এই বইয়ের ৭ম অধ্যায়ের ৪৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
০৩। (সারহুবানীল আসর যাহা হানাফী মাজহাবের একটি বিখ্যাত কিতাব) যার লেখক ইমাম তাহাবী এই কিতাবের ৩য় অধ্যায় পৃ. নং-৮৬-৮৮ ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
০৪। কিতাবে এ সারহে – অধ্যায় ১০ পৃষ্ঠা ৪৬৩,
০৫। ইবনে তাইমিয়া ছিলেন ৭ম হিজরীর একজন বিখ্যাত আলেমদ্বীন ওনার জন্ম ছিল (৬৬১-৭২৮ হিজরী) উনার ফতোয়া ছিল ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
৭ম হিজরীতে আরো একজন আলেম পাওয়া যায় যিনি ইবনে তাইমিয়ার আগের আলেম ছিলেন । যার নাম ইমাম আবু নাজম মোঃ ইবনুল কাসীর বিন হইবেতুল্লাহ যার মৃত্যু হয়েছিল ৬২৪ হিজরীতে তার মতেও ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
এছাড়া ৭ম হিজরীতে আরো একজন আলেম পাওয়া যায় যার নাম ইমাম ইবনে সাই (র.) যার জন্মছিল ৫৯৩ হি. এবং মৃত্যু ছিল ৬৭৪ উনার লেখা একটি বই এর নাম তারিক ইবনুল সাঈ যার ৯ম অধ্যায় ৩২৩/৩২৪ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে
আরো আগে যাই। ৬ষ্ঠ হিজরি ২ জন বড় আলেম পাওয়া যায়।
৬ষ্ঠ হিজরীতে ঃ- ইমাম ইবনে রুশ (জন্ম-৫২০ হিজরীতে- মৃত্যু ৫৯৫ ) উনার লেখা একটি বই আছে ”বিদায়াতুল মসতাহীদ” অধ্যায়- ৩৪৮-৩৫০ এ উল্লেখ্য আছে উমর এর শাসনামলে সাময়িক ভাবে এক মসলিশে তিন তালাক তিন গণ্য করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি ছিল তাঁর শাসনী আমল। কারন
ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে আব্দুর রাযযাকের প্রমুখাৎ, তিনি তাউসের পুত্রের বাচনিক এবং তিনি স্বীয় পিতার নিকট হতে আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) এর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র যুগে আর আবূ বাকরের (রাঃ) সময়ে আর উমার (রাঃ) এর খিলাফাতের দু’বৎসর কাল পর্যন্ত একত্রিতভাবে তিন তালাক এক তালাক বলে গণ্য হত।
অতঃপর উমার (রাঃ) বললেন, যে বিষয়ে জনগণকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল, তারা সেটাকে তরান্বিত করেছে। এমন অবস্থায় যদি আমরা তাদের উপর তিন তালাকের বিধান জারী করে দেই, তাহলে উত্তম হয়। অতঃপর তিনি সেই ব্যবস্থাই প্রবর্তিত করলেন।
একত্রে তিন তালাক দেয়া হলে এক তালাক বলে গণ্য হবে। এর প্রমাণঃ (আবূ রুকানার স্বিতীয় স্ত্রী আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট তার শারীরিক অক্ষমতার কথা প্রকাশ করলে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদ ইয়াযীদকে (আবূ রুকানাকে) বললেন, তুমি তাকে ত্বালাক দাও। তখন সে ত্বলাক দিল। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি তোমার (পূর্ব স্ত্রী) উম্মু রাকানা ও রুকানার ভাইদেরকে ফিরিয়ে নাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমিতো তাকে তিন ত্বলাক দিয়ে ফেলেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তা জানি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, “হে নবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে ত্বলাক দিবে তখন তাদেরকে ইদ্দাতের উপর ত্বলাক দিবে”। (আত-ত্বলাক ৬৫:১) (সহীহ আবু দাউদ হাদীস নং ২১৯৬)
উপরোক্ত হাদীসে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত হাদীসে তিন ত্বলাক দেয়া বলতে বিখ্যাত ভাষ্য গ্রন্থ ‘আউনুল মা’বুদ ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠায় (আরবী) ব্যাখ্যায় (আরবী) উল্লেখ করেছেন। যার অর্থ আবূ রুকানা তার স্ত্রীকে এক সাথেই তিন ত্বলাক প্রদান করেছিলো।
এখন প্রশ্ন, উমার (রাঃ) এ নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন কেন? প্রকাশ থাকে যে,তালাক সম্বন্ধেও যখন লোকেরা বাড়াবাড়ি করতে লাগল আর যে বিষয়ে তাদেরকে অবসর ও প্রতীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তারা সে বিষয়ে বিলম্ব না করে শারী’আতের উদ্দেশ্যের বিপরীত সাময়িক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে ক্ষিপ্রগতিতে তালাক দেয়ার কাজে বাহাদুর হয়ে উঠল,
তখন দ্বিতীয় খালীফা উমার (রাঃ)’র ধারণা হল যে, শাস্তির ব্যবস্থা না করলে জনসাধারণ এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করবে না, তখন তিনি শাস্তি ও দণ্ডস্বরূপ এক সঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাকের জন্য তিন তালাকের হুকুম প্রদান করলেন। যেমন তিনি মদ্যপায়ীর ৮০ দুররা আর দেশ বিতাড়িত করার আদেশ ইতোপূর্বে প্রদান করেছিলেন, ঠিক সেরূপ তাঁর এ আদশেও প্রযোজ্য হল। তাঁর দুররা মারা আর মাথা মুড়াবার আদেশ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং প্রথম খালীফা আবূ বাকর (রাঃ) এর সাথে সুসমঞ্জস না হলেও যুগের অবস্থা আর জাতির স্বার্থের জন্য আমীরুল মু’মিনীনরূপে তাঁর এরূপ করার অধিকার ছিল, সুতরাং তিনি তাই করলেন। অতএবং তাঁর এ শাসন ব্যবস্থার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের নির্দেশ প্রত্যঅখ্যান করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে টিকতে পারে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্ট যে, খালীফা ও শাসনকর্তাদের উপরোক্ত ধরনের যে ব্যবস্থা আল্লাহর গ্রস্থ ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে বর্ণিত ও উক্ত দু’বস্তু হতে গৃহীত, কেবল সেগুলোই আসল ও স্থায়ী এবং ব্যাপক আইনের মর্যাদা লাভ করার অধিকারী।
সুতরাং উমার ফারূকের শাসনমূলক অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলোকে স্থায়ী আইনের মর্যাদা দান করা আদৌ আবশ্যক নয়। পক্ষান্তরে যদি বুঝা যায় যে,তাঁর শাসনমূলক ব্যবস্থা জাতির পক্ষে সঙ্কট ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দণ্ডবিধির যে ধারার সাহায্যে তিনি সমষ্টিগত তিন তালাকের বিদ’আত রুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন,
তাঁর সেই শাসনবিধিই উক্ত বিদ’আতের ছড়াছড়ি ও বহুবিস্তৃতির কারণে পরিণত হয়ে চলেছে- যেরূপ ইদানীং তিন তালাকের ব্যাপারে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, হাজারে ও লাখেও কেউ কুরআন ও সুন্নাহর বিধানমত স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে কিনা সন্দেহ- এরূপ অবস্থায় উমার (রাঃ) এর শাসনমূলক অস্থায়ী নির্দেশ অবশ্যই পরিত্যাক্ত হবে এবং প্রাথমিক যুগীয় ব্যবস্থায় পুনঃ প্রবর্তন করতে হবে। আমাদের যুগের বিদ্বানগণের কর্তব্য প্রত্যেক যুগের উম্মাতের বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং জাতীয় সঙ্কট দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। একটি প্রশাসনিক নির্দেশকে আঁকড়ে রেখে মুসলমানদেরকে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া উলামায়ে ইসলামের উচিত নয়।
উমার ইবনুল খাত্তাব বললেন- তিনটি বিষয়ের জন্য আমি যেরূপ অনুতপ্ত, এরূপ অন্য কোন কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত নই,
প্রথমতঃ আমি তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করা কেন নিষিদ্ধ করলাম না।
দ্বিতীয়তঃ কেন আমি মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদেরকে বিবাহিত করলাম না,
তৃতীয়তঃ অগ্নিপতঙ্গ কেন হত্যা করলাম না। ইগাসার নতুন সংস্করণে আছে, কেন আমি ব্যাবসাদার ক্রন্দনকারীদের হত্যা করলাম না।
কোন দেশে যদি বিদ’আতী পন্থায় তালাক দেয়ার প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ কের যেরূপ উমার এর যুগে ঘটেছিল তাহলে শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক যদি মনে করেন যে, এক সাথে তিন তালাকতে তিন তালাক হিসেবেই গণ্য করা হবে, তাহলে তিনি এরূপ ঘোষণা শাস্তিমূলকভাবে দিতে পারেন। কিন্তু বর্তমান যুগে সে যুগের ন্যায় অবস্থা সৃষ্টি হয়নি এবং নেই।
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন- দেখো, মাত্র দু’বার তালাক দিলেই স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে পুরুষ তাকে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারে। অতঃপর হয় উক্ত নারীর সাথে উত্তমরূপে সংসার নির্বাহ অথবা উত্তম রূপে বিচ্ছেদ। আর যে মাহর তোমরা নারীদের দিয়েছ তার কিছুই গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়… (সূরা আল-বাকারাহঃ ২২৯) নবী (সঃ) এর জামানায় আবু বক্কর এর জামানায় ও তার পরবর্তী ওমরের শাসনামল ২ বছর পর্যন্ত ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইত।
যা পরবর্তী এখনো আলেমগণ একমত যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
আরো আগে যাই। ৫ষ্ঠ হিজরিতের আলেম পাওয়া যায়।
৫ম হিজরীতে ঃ- ইমাম ফকরুদ্দীণ আল রাজী আরেক নাম করা মুফাস্সির ও ফিকে ইমাম ছিল। উনার জন্ম ছিল ৫৪৪ হিজরী, মৃত্যু ছিল- ৬০৬। উনার একটি বিখ্যাত কিতাব আছে “তাফসীর আর রাজী” অধ্যায়-৬, পৃষ্ঠা-১০৪ উনার মতে ও প্রায় সকল আলেমের মতে যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইত।
তার আগে ৫ম হিজরীতে আরো ২জন আলেম পাওয়া যায়, যাদের মতেও যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
ইমাম আহমদ বিন ইবনে মোহাম্মদ (জন্ম-৪০৬, মৃত্য- ৪৫৯) উনার বিখ্যাত কিতাব “আল মুকসে ফিল ইলমে সুরাত” পৃষ্ঠা- ৮০-৮২ যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
ইমাম মোঃ ইবনুল কাজী এ আজ তাঁর লেখা একটি কিতাব “মাজাহিবাল ইককাম” পৃষ্ঠা- ২৮৯, যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
এর আগেও ৪র্থ হিজরীতে আলেম পাওয়া যায় যাহার হানাফী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। তাদের মধ্যে-
১।ইমাম আবু জাফর, তার মতেও যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
এর আগে ৩য় হিজরীতে একজন আলেম পাওয়া যায় ইমাম দাঊদ বিন আলী (মৃত্যু-২৭০ হিঃ) উনার একটি কিতাব ইলমাল মাআকিন, অধ্যায়-৪, পৃষ্ঠা- ৩৮৮, যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
এর আগে ২য় হিজরীতে আলেম পাওয়া যায় মোহাম্মদ বিন ইছহাক আল মাদানী যিনি ছিলেন ফিকা, ফতুয়া ও মোফাস্সির ইমাম তাঁর একটি কিতাব আছে “তাত তাওজি” অধ্যায়-২৫, পৃষ্ঠা- ১৯২ এর মতে যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
তার পর আরও একজন ইমাম পাওয়া যায় ইমাম তাহারী যিনি হানাফী মাজহাবের অনেক বড় আলেম ছিলেন উনার লিখা একটি বই “ইখতেলাফে উলামা” যার ২য় অধ্যায় পৃষ্ঠা নং- ৪৬২ এর মত যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
১ম হিজরীতে ইজমা মতে যে ১ মজলিসে একত্রিত ৩ তালাক ১ হিসেবে গন্য হইবে ।
যার রেফারেন্স দিয়েছেন ইমাম ইবনুল কাইয়ূম কিতাব হলো ইলাবুল মকিন ।অধ্যায় : ৩ , পৃ. ৪৩ ।
৮ম হিজরীর আরেকজন আলেম পাওয়া যায় ইমাম ইউসুফ বিন আল হাদী মৃত্যু ৯০৯ হিজরী কিতাব হলো সাইরুল ইলা ইলম তালাকুস সালাসা ।
এই ছাড়াও বর্তমান যুগে অনেক বড় আলেম আছেন যেমন একজন হলো : ইমামা আল্লামা আল বানী যার কিতাব হলো সিলসিলাতুল হাদীসা আজাহিফা যার ৩য় অধ্যায় ২৭২ পৃ. ।
বর্তমান সময়ের আরেক বড় আলেম মুহাদ্দিস মুফাসসিরন নাছিরউদ্দিন আল বানী বলেন সকল আলেমগণ যেন সুন্নাতের দিকে ফিরে আসে ।
এছাড়া ও একহাজার বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত (জামিয়াতুল আজহার ইউনিভার্সিটি) রয়েছে যার একটি কিতাব আছে ফিকাহ্ আর উপর :
(আল ফিকহু আল মাজহিল আরবা )বই লিখেছেন : আব্দুর রহমান আল জুজাইরি এখানে ও তালাকের বিভিন্ন মাছহালা সম্বন্ধে সহিহ হাদিস ফিকাহ্ আলমের ফতোয়া পাওয়া যায়।
ভারতের একজন বিখ্যাত মুফাসসির আলেমদ্বিন শায়েখ কেফায়েত উল্ল্যাহ সানাবিলী তার তালাকে আহকাম ও১ মজলিসে ৩ তালাক ১ হয় । তার বয়ানে এমনটাই কুরআন হাদীস ও ফতুলার মতে রেফারেন্স দিয়েছেন ।
রুজু কি?
রুজু আরবী শব্দ। অর্থ হল, ফিরিয়ে আনা।
কেউ যদি ১ বার তালাক অথবা ২ বার তালাক দিয়ে দেয়, অতঃপর রুজু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু রুজু কিভাবে করতে হয় যদি একটু বিস্তারিত বলতেন। এবং স্ত্রি কে পুন্রায় ফিরিয়ে আনার জন্য কি করতে হবে? পুনরায় বিবাহ করতে হবে নাকি নিয়ে আস্লেই হবে ?
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তালাকের পর রুজু করার মানে হল, এক বা দুই তালাকে রেজয়ীর মাধ্যমে স্ত্রীকে যে বিচ্ছেদ করে দেয়া হল, সেখান থেকে স্ত্রীকে আবার স্ত্রীর মর্যাদায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা।
এক বার বা দুই বার তালাক প্রদান করার পর স্ত্রীকে রুজু বা ফিরিয়ে আনার সময়সীমা হল, ইদ্দত তথা তালাকপ্রাপ্তা হবার পর তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হবার আগেই স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।
রুজু তথা ফিরিয়ে আনার পদ্ধতি হল, মুখে বলার মাধ্যমে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, আমি আমার স্ত্রীকে রুজু করলাম বা ফিরিয়ে আনলাম। বা তালাক ফিরিয়ে নিলাম ইত্যাদি।
অথবা আচরণের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা। যেমন স্ত্রীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করা। চুম্বন করা, কাছে টেনে নেয়া ইত্যাদি। সহজ কথায় স্ত্রীসূলভ আচরণ করার মাধ্যমে রুজু করা যায়। বা মুখে বলেও রুজু করা যায়।
الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ ۖ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ ۗ [٢:٢٢٩
তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। [সূরা বাকারা-২২৯]
আবার,অনুবাদ হবে এমন-“তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের তালাক দেয়ার পর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেয়, তখন তাদের নিজেদের প্রস্তাবিত স্বামীদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে তোমরা বাধা দিও না, যখন তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়”(2:232)।
প্রথমবার 3 মাসে 3 তালাক হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর, যদি স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সম্মত না হয়ে সংসার জীবন-যাপন করতে চাইবে, ততক্ষণ স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না!! আর, যদি স্বামী স্ত্রীকে 3 মাসের মধ্যে ফিরিয়ে না আনে, সেক্ষেত্রে স্ত্রী অন্য কোনও পুরুষকে বিবাহ করতে পারে।
তবে, যদি স্ত্রী 3 মাস পরও অন্য কোনও পুরুষকে বিবাহ না করে, সেক্ষেত্রে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে এনে পুনরায় সংসার জীবন-যাপন করতে পারবে।
অথচ কোন পুরুষ মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় হোক বা রাগের মাথায় হোক, হঠাৎ তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এক সাথে তিন-তালাক উচ্চারণ করলেই নাকি তালাক কার্যকর হয়ে যাবে বলে ফতোয়া দেয়া হচ্ছে।
আর এর ফলে বিশেষ করে গ্রাম্য ও অশিক্ষিত সমাজের অজ্ঞ ও সরল মনের মানুষেরা ধোকা খাচ্ছে, তাদের জীবনে শান্তি নয় বরং অশান্তির বীজ রোপিত হচ্ছে এবং ছেলে-মেয়ে নিয়ে এতদিনের সাজানো সংসার, পরিবার পরিজনের সাথে সম্পর্কের বাধন, সব মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে!!??
আল্লাহর বিধানে এভাবে তালাক দেয়ার কোন অধিকার যে পুরুষকে দেয়ো হয়নি- তা কি ইসলাম প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত আলেম সমাজ বোঝেন না?
শুধু তাই নয়, সুযোগ সন্ধানী মাতবর ও মোড়লদের কু-বুদ্ধিতে তখন সেই তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ফিরে পাবার আশায় অন্যের সাথে বিয়ে দেয়ার নাটকের আয়োজন করা হয় এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভাড়া করা দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবার কথা মাথায় রেখে এমনতর হারাম কর্মটি করা হয়ে থাকে।
অথচ এই ধরনের ঘৃণ্য পন্থার নির্দেশনা আল- কোরআনের কোথাও বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই। কিন্তু ধর্মান্ধ ও ধর্ম-ব্যাবসায়ীদের এসব ধর্মহীন কর্মকান্ডের কারনে একদিকে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞরা অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। অপরদিকে ইসলাম বিদ্বেষীরা কুৎসা রটানোর ও মিথ্যাচারের সুযোগ পেযে যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে মনে হয়- শুধু অজ্ঞরাই নয়, শিক্ষিত জ্ঞানী- গুণীজনেরাও যেন এক অজানা পাপের ভয়ে ভীত হয়ে ধর্মান্ধ ও ধর্ম-ব্যাবসায়ীদের বেড়াজালে বিবেক হারিয়ে অন্ধ সাজার ভান করে বেসুরে সুর মেলাতে ব্যস্ত। আমাদের ভুললে চলবে না যে, আল্লাহর বিধান জীবনকে জটিল ও কঠিন নয়, বরং সরল, সহজ ও অর্থবহ করে গড়ে তোলার জন্যই প্রেরিত হয়েছে। আল- কোরআন স্বার্থবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি নয় যে তারা মনগড়া যা বলবে ও চাইবে তাই ধর্মীয় বিধান হয়ে যাবে।
আল্লাহতায়ালার কিতাব হলো মুসলিমের জীবন পরিচালনার মূল উৎস এবং সেই উৎসের সাথে সম্পৃক্ত রাসূলের (সাঃ) সকল আদর্শ আমাদের জীবন পথের পাথেয়। তাই আসুন- মহান স্রষ্টার বাণী আল-কোরআনের রশি শক্ত করে ধরি এবং রাসূলের (সাঃ) আদর্শকে সঠিকভাবে চিনে ও মেনে জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে গড়ে তুলে।
বিজ্ঞ ও বিবেকবান আলেম সমাজের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনাদের মুখের পানে চেয়ে থাকা সরল মানুষগুলোর জীবনকে সহজ, সরল ও শান্তিময় করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা যে বিধান দিয়েছেন তা সঠিকভাবে প্রকাশ করুন। অযথা কাঠিন্য আরোপ ও মনগড়া রীতির উদ্ভব ঘটিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে হাস্যস্পদ ও জটিল করে তুলবেন না। ইহকাল ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তি প্রাপ্তিই যেন আমাদের সবার মূল লক্ষ্য হয়
আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল দল, মত, পথ ও যুক্তি পরিহার করে তার দেয়া বিধান আল কুরআন ও তার রাসূল সা. এর সুন্নাহর প্রমাণ অনুযায়ী সকলকিছু জানার, মানার ও তা অপরকে জানানোর তৌফিক দিন,আমিন।