আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিশ্বনবী (স) বলেছেন- গিলাক বা রাগ অবস্থায় তালাক বা দাস মুক্তি হয় না”(আবুদাউদ, কিতাবুত তালাক, হাদীস 2191)
بَابٌ فِي الطَّلَاقِ عَلَى غَلَطٍ
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ سَعْدٍ الزُّهْرِيُّ، أَنَّ يَعْقُوبَ بْنَ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَهُمْ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ يَزِيدَ الْحِمْصِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، الَّذِي كَانَ يَسْكُنُ إِيلِيَا، قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ عَدِيِّ بْنِ عَدَيٍّ الْكِنْدِيِّ، حَتَّى قَدِمْنَا مَكَّةَ، فَبَعَثَنِي إِلَى صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ، وَكَانَتْ قَدْ حَفِظَتْ مِنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ عَائِشَةَ تَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا طَلَاقَ، وَلَا عَتَاقَ فِي غِلَاقٍ، قَالَ أَبُو دَاوُدَ: الْغِلَاقُ: أَظُنُّهُ فِي الْغَضَبِ حسن
পরিচ্ছেদঃ ৮. রাগান্বিত অবস্থায় তালাক দেয়া
২১৯৩। ইলিয়ার অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনু উবাইদ ইবনু আবূ সালিহ (রহ.) সূত্রে বর্ণিত। বলেন, আমি ’আদী ইবনু ’আদী আল-কিনদীর সাথে সিরিয়া থেকে রওয়ানা হয়ে মক্কায় গেলাম। তিনি আমাকে সাফিয়্যাহ বিনতু শাইবার কাছে পাঠালেন। কেননা সাফিয়্যাহ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস সংরক্ষণ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাগের অবস্থায় কোনো তালাক হয় না এবং দাসত্বমুক্ত করা যায় না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহ.) বলেন, আমার মতে ’আল-গিলাক’ অর্থ রাগ।[1]
১. ক্রোধানদ্ধ অবস্থার তালাক : ক্রোধান্ধ অবস্থায় মানুষ স্বাভাবিক চরিত্র হারিয়ে ফেলে। সেকারণে দাম্পত্য জীবনের সিদ্ধান্তকারী এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ক্রুদ্ধ অবস্থায় দিলে ইসলামী শরী‘আত ঐ তালাককে অগ্রাহ্য করেছে। ক্রোধান্ধ বলতে ঐ ক্রোধকে বুঝতে হবে, যে ক্রোধে স্বামী তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে’।[1]
২. পাগল, মাতাল বা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থার তালাক : এই অবস্থায় দেওয়া কোন তালাক গ্রাহ্য হবে না। এইরূপ এক ব্যক্তিকে খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয নেশা করার শাস্তি স্বরূপ (আশি) বেত মেরেছিলেন। অতঃপর তার স্ত্রীকে তার কাছে ফেরৎ দিয়েছিলেন।[2] হানাফী মাযহাব মতে এই অবস্থায় তালাক পতিত হবে (কুদূরী পৃঃ ১৭৩)।
৩. যবরদস্তি তালাক : স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করে বা ভয়-ভীতি বা প্রতারণা করে তার নিকট থেকে তালাক আদায় করা নিষিদ্ধ। বরং ঐসব স্ত্রীর জন্য ‘খোলা’ তালাকের ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছে।
ছাহাবায়ে কেরাম যবরদস্তি তালাককে তালাক হিসাবে গণ্য করতেন না (যাদুল মা‘আদ ৫/১৮৯)। জমহূর বিদ্বানগণের নিকটে যবরদস্তি তালাক পতিত হবে না। তবে হানাফী মাযহাব মতে তালাক পতিত হবে। কেননা হাদীছে এসেছে, বিবাহ, তালাক ও রাজ‘আত এই তিনটি বিষয়ে হাসি-ঠাট্টা গ্রহণযোগ্য নয়’। অর্থাৎ তা পতিত হবে।[3]
জবাব: হাসি-ঠাট্টা আর যবরদস্তি এক বস্ত্ত নয়। অতএব যবরদস্তি তালাক পতিত না হওয়াই হাদীছ সম্মত।
৪. ঋতুকালে বা নেফাস অবস্থায় তালাক, সহবাসকৃত পবিত্র অবস্থায় তালাক, সহবাসহীন একই তোহরে একত্রিত বা পৃথক পৃথকভাবে তিন তালাক প্রদান করা। ক্রুদ্ধ, পাগল, বেহুঁশ, যবরদস্তি, অজ্ঞান, নাবালক বা নিন্দ্রাবস্থায় উচ্চারিত বা প্রদত্ত তালাককে তালাক গণ্য না করার দলীল সমূহ নিম্নরূপ :
(১) আল্লাহ বলেন, … কেবল ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যাকে যবরদস্তি করা হয়েছে। অথচ তার অন্তর ঈমানের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত রয়েছে’ (নাহ্ল ১৬/১০৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিনটি ব্যাপারে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে (ক) ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না জাগরিত হয় (খ) নাবালক শিশু যতক্ষণ না বালেগ হয় (গ) জ্ঞানহারা ব্যক্তি যতক্ষণ না সুস্থ জ্ঞান ফিরে পায়’।[4] তিনি আরও বলেন, তালাক নেই ও দাসমুক্তি নেই ‘ইগলাক্ব’ অবস্থায়।[5] আবু দাঊদ বলেন, ‘ইগলাক্ব’ গালাক্ব ধাতু হ’তে উৎপন্ন। যার অর্থ বন্ধ হওয়া। ক্রোধান্ধ, পাগল ও যবরদস্তির অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি লোপ পায়। তাই এ অবস্থাকে ‘ইগলাক্ব’ বলা হয় (ঐ, হাশিয়া)।
উপরে বর্ণিত অবস্থার তালাক সমূহকে কুরআন ও সুন্নাহর কোথাও শারঈ তালাক বলে গণ্য করা হয়নি। তথাপি একে পরবর্তীতে ‘তালাক্বে বেদ‘ঈ’ বা বিদ‘আতী তালাক নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং একত্রিতভাবে তিন তালাক দিলে ঐ ব্যক্তি গোনাহগার হবে (وكان عاصيًا)। কিন্তু তা সত্ত্বেও তালাক হয়ে যাবে বলা হয়েছে।[6]
[1]. আল-ফিক্বহুল ইসলামী ৭/৩৬৫।
[2]. যাদুল মা‘আদ ৫/১৯১; মুহাল্লা ৯/৪৭৩-৭৪, মাসআলা নং ১৯৬৪।
[3]. তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩২৮৪; আল-ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহূ ৭/৩৬৭; সনদ হাসান, ইরওয়া হা/১৮৬২, ৬/২২৪।
[4]. ছহীহ আবু দাঊদ হা/৩৭০৩।
[5]. ছহীহ আবু দাঊদ হা/১৯১৯; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৬৬৫; মিশকাত হা/৩২৮৫।
[6]. কুদূরী, পৃঃ ১৭০; হেদায়া ২/৩৫৫।